তরুণ প্রজন্মকে টিকিয়ে রাখতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের করণীয়
বিশ্বায়নের এই যুগে প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান উন্নতির সঙ্গে মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহার যেমন আশীর্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, তেমনই এর নেতিবাচক দিকগুলো সমাজে এক ভয়াবহ সমস্যার জন্ম দিয়েছে। মোবাইল ফোনে আসক্তি, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে, নৈতিক অবক্ষয়, মানসিক সমস্যা, এবং মূল্যবোধের অভাবে রূপ নিচ্ছে। এই সমস্যাগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে এই ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। শিক্ষক, অভিভাবক, এবং সমাজের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে।
![]() |
কাপাসিয়া সেন্টাল স্কুলের এন্ড কলেজ এর সামনে |
![]() |
কাপাসিয়া সেন্টাল স্কুলের এন্ড কলেজ এর সামনে |
![]() |
কাপাসিয়া সেন্টাল স্কুলের এন্ড কলেজ এর সামনে |
মোবাইল ফোন আসক্তির প্রভাব
তরুণদের মধ্যে মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার মানসিক ও সামাজিক জীবনে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তারা দিনে-রাতে মোবাইল স্ক্রিনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে, যার ফলে তারা শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক চাপ, একাকিত্ব এবং হতাশার শিকার হচ্ছে। এই আসক্তি তাদের পড়াশোনা থেকে বিচ্যুত করছে এবং নৈতিক শিক্ষার অভাব সৃষ্টি করছে। এমনকি, সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার তাদের সময় নষ্ট করার পাশাপাশি ভুল তথ্যের শিকার হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়িয়ে তুলেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ইউটিউব, টিকটক, এবং অন্যান্য ভিডিও কন্টেন্ট ভিত্তিক প্ল্যাটফর্মগুলো তরুণদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। সেখানে প্রচারিত ভুয়া তথ্য এবং অবৈধ বিষয়বস্তু তাদের মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করছে, যা পরবর্তী জীবনে ভুল সিদ্ধান্ত এবং অবক্ষয়মূলক মানসিকতার জন্ম দিচ্ছে।
শিক্ষক ও অভিভাবকদের ভূমিকা
১. সচেতনতা বৃদ্ধি:
শিক্ষক এবং অভিভাবকদের প্রথম কাজ হলো মোবাইল ফোনের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে তরুণদের সচেতন করা। শিক্ষার্থীদের বুঝাতে হবে যে, প্রযুক্তি একটি মাধ্যম মাত্র, এবং এটি ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি জানা অত্যন্ত জরুরি।
২. নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার:
অভিভাবকরা তাদের সন্তানের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করতে পারেন, যার মধ্যে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে। শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে এবং বাড়িতে পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ে গঠনমূলক কার্যক্রমে উৎসাহিত করা।
৩. নতুন শিক্ষাক্রম ও কর্মশালা:
শিক্ষকদের উচিত, শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শেখানোর জন্য নতুন পাঠ্যক্রম এবং কর্মশালার আয়োজন করা। উদাহরণস্বরূপ, সাইবার নিরাপত্তা, তথ্য যাচাইয়ের পদ্ধতি এবং প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার শেখানো।
৪. নৈতিক শিক্ষা:
শিক্ষক ও অভিভাবকদের উচিত তরুণদের নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা, যা তাদের ভালো-মন্দের পার্থক্য করতে সাহায্য করবে। তাদের উচিত সন্তানদের আধ্যাত্মিক এবং মানবিক মূল্যবোধের উপর জোর দেওয়া, যাতে তারা সমাজে একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে।
৫. মানসিক সাপোর্ট:
মোবাইল আসক্তি কাটিয়ে ওঠার জন্য তরুণদের মানসিক সাপোর্ট প্রয়োজন। শিক্ষক ও অভিভাবকদের উচিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করা এবং তাদের সমস্যাগুলো শুনে সমাধান দেওয়া।
তরুণদের আত্মসচেতনতা গড়ে তোলা
শুধু শিক্ষক ও অভিভাবকদের ভূমিকা যথেষ্ট নয়; তরুণদের নিজেদের মধ্যে আত্মসচেতনতা গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের বুঝতে হবে যে, প্রযুক্তি একটি শক্তিশালী মাধ্যম যা জীবনের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে, কিন্তু এর অপব্যবহার জীবনে ধ্বংস ডেকে আনতে পারে।
তরুণদের অনুপ্রাণিত করতে হবে যে, ইন্টারনেট থেকে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে তারা নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে। একই সঙ্গে, তাদের বুঝাতে হবে যে, অনলাইনের সব তথ্য সঠিক নয়, এবং যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়াই সঠিক পথ।
তরুণ প্রজন্ম আমাদের ভবিষ্যৎ। তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে সুস্থ এবং সৃজনশীল জীবনে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার। প্রযুক্তি আসক্তির এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষক, অভিভাবক এবং সমাজের সকলের ভূমিকা অপরিসীম।
মোবাইল ফোনের সঠিক ব্যবহার শেখানোর মাধ্যমে এবং নৈতিক মূল্যবোধের ওপর জোর দিয়ে আমরা তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ, সৃষ্টিশীল এবং দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। বিশ্বায়নের এই প্রতিযোগিতামূলক যুগে টিকে থাকতে হলে একমাত্র শিক্ষার সঠিক দিকনির্দেশনা এবং আত্মসচেতনতা আমাদের লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করবে।
লেখক:
মঞ্জিল মোল্লা
অধ্যক্ষ
ব্রেভ জুবিলেন্ট স্কলার্স অব মনোহরদী মডেল কলেজ
রসুলপুর, হাতিরদিয়া, মনোহরদী, নরসিংদী
monjilmolla.du@gmail.com | 01767-449440
Post a Comment
0Comments